সমকালীন রাজনীতি এবং বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ০৪:২৭:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১১৬ বার পড়া হয়েছে
০৫ই আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন এবং পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় । আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিজয়ের পর এক আকাশ সমান আশা ছিল প্রত্যাশা ছিল সকল অন্যায় অনিয়ম প্রতিহিংসারও বিলুপ্তি হবে। সুখী সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে । অত্যান্ত চ্যালেঞ্জিং এই কর্ম এবং আশা জাগিয়েছে এই অন্তবর্তীকালীন সরকার । নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের কোন দল নেই , রাজনৈতিক কোন ট্যাগ নেই। তাই আন্দোলনে পরাজিত সরকারের দল ব্যতীত ওনার কোন শত্রুও নেই । ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকল রাজনৈতিক মতাদর্শকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই কাজ। প্রধান কাজ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা মানুষকে সুখে রাখা, শান্তিতে রাখা । অন্ন ,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা , চিকিৎসা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । সেই পথেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। উপদেষ্টা মন্ডলী জানিয়েছেন ওনাদের নিয়োগ দিয়েছে কোটা বাতিল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারা । ছাত্র নেতাদের চাওয়া পাওয়াকে মতাদর্শক অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এড়িয়ে চলা ভালো চোখে নেয় নি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া দলগুলো দলীয় কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দলের কর্মীরা সমালোচনা শুরু করেন । অন্যদিকে জামায়াত ইসলাম শতভাগ সমর্থন দিতে থাকে। ইতিমধ্যে আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমুল্যের দাম । শেয়ার বাজারের দরপতনে সাধারন মানুষ বিরক্ত কিছুটা। আন্দোলনে আন্দোলনকারী সকলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় আওয়ামীলীগকে। তাই নিষেধের দাবি তোলা হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। এমনিতেই আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, জানমালের নিরাপত্তা দখল বানিজ্য ডাকাতি লূটতরাজ থামানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সেনাবাহীনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদত্যাদের দাবি জোরদার এবং সময় বেধে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেকেই একমত হচ্ছে না। তারা দিচ্ছেন নানা মত। এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কর্মসূচিগুলোতে সরকার পতনের আগমুহুর্তের মতন এখন আর সাধারণ মানুষ অংশগ্রহন করছেনা । রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও উপস্থিতি কম। দুই একটি ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতি রয়েছে । বড় দলগুলোর মধ্যে বি.এন.পি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না। কারণ এতে সাংবিধানিক শুন্যতার সৃষ্টি হবে , যেহেতু স্পিকার নেই , ডেপুটি স্পীকার জেলে। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে কিভাবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হবে এই সংবিধান না মানলে সংকট বাড়বে এবং গৃহযুদ্ধের মত সম্ভাবনা দেখছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা । তাছাড়া সংবিধান বাতিল বা রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে ,নতুন করে সংবিধান রচনা করলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলোর আদর্শ এবং নীতিগত ভাবে তারা দূর্বল হয়ে পড়বে।
বিশেষ করে আওয়ামীলীগের সাথে সাথে বি.এন.পির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে আদর্শে দল গঠন করেছেন তারও আদর্শিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। তাছাড়া যারা সংবিধান রচনা করবেন তারাই রাষ্ট্রের ইতিহাস হয়ে থাকবে। আন্দোলন এবং গনঅভ্যুত্থানে যারা জয়ী হয় তারাই ইতিহাস হয় এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই আন্দোলনে ছাত্ররা প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিলেও পেছনে ছিল বি.এন.পি এবং জামায়েত , হিজবুত তাহেরী, গণ পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন । যাদের শক্তিশালী ভূমিকা ছিল এই সংবিধান বাতিল এবং নতুন করে রচনা করলে সেখানে কি প্রাধান্য পাবে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিমধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সমর্থকদের বক্তব্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন মনে করছেন বি এন পি এবং অন্যান্য স্বাধীনতার স্বপক্ষের দাবি করা দলগুলোর আদর্শিক দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। কেননা স্বাধীনতা এবং ৭১ কে খাটো করে ২৪ কে বড় করার চেষ্টা থাকবে এতে করে জামায়াতের উপর যে দোষরোপগুলো করা হয় তার আর গুরুত্ব থাকবে না । অনেকে বলছে এই সরকার থাকা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জামায়াতের লোকজন বসানো হচ্ছে এবং সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আবার বি এন পি এবং অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে ততবেশি ভাল করবে বি এন পি । যত সময় যাবে বি এন পির জন্য তত লস । আর অন্য দিকে ভোটার মাঠে অপেক্ষাকৃত বড় দু দলের চেয়ে দুর্বল জামায়াত মনে করে এই সরকারের মেয়াদও ক্ষমতার অনুশীলন তাদের জন্যি খুবই ভাল। তাই সংবিধান;। রাষ্ট্রপতি এই বিষয় গুলোতে সংষ্কার কিংবা বাতিল পদত্যাগে সময় বাড়বে এই সরকারের। অন্যদিকে পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ”মার্সাল ল ” শব্দটিও দরজায় ঠক ঠক করছে মিশন বাতিল আশঙ্খায় বাধা।সাধারন জনগন সরকার যেই হোক না কেন তারা তাদের জানমাল নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা , দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রন চায়। যা এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। যা তাদেরকে ভাবাচ্ছে। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার এই বিষয়গুলোর সমাধান করতে পারলে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামানো কঠিন হবে। কেননা পরবর্তী সরকার তারাই গঠন করবে যারা আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে জিতে আসবে। যেমনটা গঠন হয়েছে এই সরকার । সাধারণ মানুষ কোন রক্তপাত আর আন্দোলন চায়না তাদেরকে মাঠে নামার জন্য বাধ্য না করলে তারা সকল কিছুই মেনে নেয় ।
সকল হিংসা বিদ্বেষ ভেদাভেদ , সহিংসতা, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ নিপাত যাক, বাংলাদেশ টিকে থাক।