ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মীয় উন্মাদনা গ্রাস করেছে জাতিকে

News Desk
  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে

ভারতীয় উপমহাদেশে সনাতন ধর্ম প্রাচীন এবং আদি ধর্ম বলা চলে কেননা অধিকাংশই সনাতন ধর্ম অনুসরন করতো পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের বিসৃতি ধটে তন্মধ্যে ইসলাম ধর্মের ব্যপকতা এবং বৃদ্ধি অনেক বেশি পায় । সনাতন ধর্মের অনুসারিরা অর্থ্যাৎ হিন্দুরা ছিল বহুভাগে বিভক্ত, মূলত চারটি সম্প্রদায় থাকলেও শাখা , প্রশাখা, উপশাখায় বিভক্ত।  ব্রাক্ষ্মন, শুদ্র ক্ষত্রিয় ,বৈষ্ণব মূল এই চার শাখার সম্প্রদায় । শাখা প্রশাখার মধ্যে যেমন ঠাকুর , আচার্য্য বন্দোপাধ্যায় , চট্টোপাধ্যায় , গুপ্ত, সাহা, পাল , কায়স্থ , সেন , হালদার ,চান্দেল, পল্লব ,ভট্ট, চানুক্য, পান্ড্য , চেরা , দাস নানা গোত্রে বিভক্ত। এরা এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের রয়েছে মানসিক  দূরত্ব । এই গোত্র গুলো সময়ের সাথে সাথে উচ্চদের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে। কারণ উচ্চ গোত্রগুলোর একসময় আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল।  তারা নির্ধারন করে দিতো কর্ম , সেই কর্মের মানুষরা আলাদা আলাদা নাম এবং নির্ধারিত স্থানে বসবাস করতো । প্রত্যেক শ্রেণির আলাদা আলাদা রীতিনীতি অনুসরন করত , একটা সময় ছিল এক গোত্রের মানুষ অন্য গোত্রের মানুষের সাথে বিয়ে কিংবা বাড়িতে পর্যন্ত খাবার খেত না  যদিও সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিল এবং ভারত উপমহাদেশে বসবাস করত। সনাতন ধর্মের অনুসারীরাই এই ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকাকে নিজেদের রাজ্য বানিয়ে শাসন করেন দীর্ঘ দিন । সর্বপ্রথম আরব শাসক মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে এই উপমহাদেশে আসলেও বছর কয়েকের বেশি টেকেনি । পরবর্তীতে সেই পূর্বের ন্যায়ই সবই চলছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রেণিগুলো আরো বেশি শক্তি সঞ্চয় করল ,তাদের গোত্র গুলোর নিয়ম কানুনও কঠিনতর হতে লাগলো অন্যদিকে মাঝে মাঝে নিচু বংশের লোকজন বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রতিবাদী হলেও তা কাজ আসে নি । এতে উঁচু নিচুর ভেদাভেদ বেড়ে যেতে লাগলো ব্রাক্ষ্মণরা পূজনীয়  স্থানে চলে গেল। সনাতন ধর্মের শুরুতে বেদ , গীতা অনুসরন থেকে আস্তে আস্তে অনেক রাজ্যে মা দূর্গা শিব কালীপূজা এবং বিভিন্ন ধরনের পুজা শুরু হয় । দুর্গা পুজা সর্বপ্রথম কপোতাক্ষের তীরে প্রাচীন বুড়ন দ্বীপ কিসান উথালী নামক স্থানে শুরু হয় । গবেষনায় দেখা যায় ১০৭৬ বঙ্গাব্দে দূর্গাপূজার সর্বপ্রথম হিসাব খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে পূজার খরচ লিপিবদ্ধ আছে , তবে সঠিক হিসাব না থাকলে ও দূর্গাপূজা ৩৫০ বছর পুরোনো বলে ধারনা করা যায় । কালী পুজা হবার কোন নমুনা কিংবা ইতিহাস ১৬শ খ্রিষ্টাব্দের আগে খুঁজে পাওয়া যায় নি । ১৭শ শতাব্দীর দিকে মঙ্গলকাব্যে ভক্তিমূলক দেবী কালীর উপস্থিত পাওয়া যায় । রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনামলে কালীপূজার ব্যপকতা বৃদ্ধি পাইয় এবং সময়ের সাথে সাথে ধর্মীয় উপসনানয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে । সনাতন ধর্ম অনুসারীদের পুজা পালন ধর্মীয় প্রার্থনায় অধিক গুরুত্ব পেতে থাকে। পূজাকে গুরুত্ব সহকারে বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মনে করা হয় । প্রকৃতির পূজায় মানুষ তাদের সত্তাকে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি,তুষ্ঠি লাভ করে। তিন হাজার বছর ধরে পুজার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পূজার অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ধরা হলেও, এর মূল অর্থ শ্রদ্ধা। আর এই পূজা প্রথমে প্রকৃতি থেকে শুরু হয় আর যাহা শক্তির পূজা। বাঙ্গালীদের মধ্যে কালী, কামেশ্বরী,জগদ্ধাত্রী্, গন্ধেশ্বরী, অন্নপূর্ণা্ , বিপদনাশিনী , সন্তোষী মাতা , মা দুর্গাকে শক্তি হিসেবে পূজা করা হয়। বাংলাদেশের সনাতনী মানুষ দুর্গাপূজাকে ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তুলে ধরে উৎসবে রূপান্তরিত করে। আর এই দুর্গাপূজায় তিনি যে একজন সনাতনী তাঁর প্রতিকি বহিঃপ্রকাশ পায় ।সনাতনীদের আবেগ , ভালবাসা , শ্রদ্ধা এটিকে ঘিরে ।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারণা সর্বপ্রথম হযরত মুহাম্মদ (সা.)  এর আমলে আরব বণিকরা শুরু করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে হযরত উমর (রা.) খেলাফতের সময় আল হাকিম (রা) ও মুগিরা (রা) সহ বেশ কয়জন সাহাবী সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। আয়তন ইউরোপের সমান এই ভারতীয় উপমহাদেশ নিয়ে আরবীয়ানদের আগ্রহ কম ছিল না।
আরবে ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসাহিক উদ্দেশ্যে এসে ইসলামের দাওয়াত দিতেন উপকূলীয় অঞ্চলে। যার প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন মসজিদ এখনো রয়েছে। যেমন রংপুরের লালমনিরহাটে সাহাবা মসজিদ। চট্টগ্রামে আবু ওয়াক্কাস (রা) মসজিদ।
ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হন বেশিরভাগ সুফি , সাধক ,  আল্লাহর ওলিদের খোদাভীরুতা  আচার আচরণে মুগ্ধ হয়ে।  যাদের মধ্যে অন্যতম হযরত শাহজালাল (রা)। ইয়েমেন থেকে ৩৬০ জন  আওলিয়া নিয়ে উপমহাদেশে এসে ইসলামের নবজাগরণ করেন হযরত শাহ পরান (র) , বায়োজিত বোস্তামি (র) , শাহ সুলতান রুমি (র) , বাবা আদম শহিদ (র) , শেখ ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকর (র)  , শেখ শরিফ উদ্দিন আবু তত্তমা  উল্লেখযোগ্য। আরবদের মধ্যে অনেকে এসেছিলেন ব্যবসায়িক কাজে,অনেকে আরব ভারত উপমহাদেশ বিজয়ের উদ্দেশ্যে।  তবে এই সুফিরা এসেছিলেন দ্বিনের  দাওয়াত দিতে ইসলামের পতাকা উড়াতে । আর উনারাই মানুষকে আকৃষ্ট করে ইসলামের পক্ষ দলে দলে নিয়ে আসেন।  ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলমানরা ১২০১ থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত শাসন করেন । মুসলমানরা সংখ্যালঘু হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ,বৌদ্ধ ,  খ্রিষ্টান সহ অন্যান ধর্মাবলম্বীরা মেনে নেয় এই সময়ের শাসকেরা ইসলাম ধর্ম প্রচার থেকেও তাদের রাজ্য পরিচালনাকে অতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাদের বংশ পরম্পরায়  শাসন ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য করণীয় গুলোকে গুরুত্ব সহকারে দেখতেন ।অন্যদিকে সুফি, সাধক,  আউলিয়া,  আল্লাহর ওলিরা ধর্ম প্রচার করতেন । আর এই সুফিসাধকের অনুসারীরা ছিলেন সবাই একেক অঞ্চলের একেকজন আল্লাহর অলিদের দাওয়াতের ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে আল্লাহর অলিদের কাছ থেকে ইসলামের বায়াত নেওয়ার কারণে একেক অঞ্চলে এই অলিদের ভক্তের সংখ্যা প্রচুর।   পীর মুর্শিদের যুগের পর যুগ অনুসরণ করে ইসলাম ধর্ম পালন করতেন সাধারণ মুসলমান।
ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে দখল করে নিলে ভারতের মুসলমানরা বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে এই নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ১৮৫৭- ১৮৮০ সালে সৈয়দ আহমদ বেরলবীর মুজাহিদুন  আন্দোলনের অনুসারীরা আহলে হাদিস আন্দোলন শুরু করেন । আহলে হাদিসের অনুসারী মুসলমানদের দাবি কুরআন এবং সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোন কিছু অনুসরণ প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ কোন মাহজার  অনুসরণের প্রয়োজন নেই তবে তাদেরকে অন্যেরা নামাহারি ওহাবী বলে চিহ্নিত করেন।
ভারতে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ । ১৮৬৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় মুসলমানদের সঠিক পথ দেখানোই একমাত্র উদ্দেশ্য এই প্রতিষ্ঠানটির । এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক আলেম ওলামার সৃষ্টি হয় । ভারতীয় উপমহাদেশে যারা বিভিন্ন সময় ভূমিকা রেখেছেওন এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ আলেম হানাফি মাঝারের অনুসাড়ী , মালেকি হাম্বলি মাজহাবকেও বিশুদ্ধ মনে করেন । চিশ্তিয়া , নকশবন্দিয়া , কাদেরিয়াহ ও সোহরাওয়ার্দিয়া সিলসিলাকেও অনুসরন করেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বার বার ব্যার্থ হয়ে দেওবন্দের আলেমগন বিভিন্ন ভাগে বিভিক্ত হয়ে পড়েন একদল আলেম মনে করেন ব্রিটিশদের বিরোধীতাই করতে হবে , আরেকদল মনে করেন আমাদের ঈমান মজবুত করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত , আরেকদল আলেম মনে করেন , ব্রিটিশদের সাথে থেকে জ্ঞান , বিজ্ঞান এবং ইসলামের মুসলমানদের উন্নয়নে অগ্রসরে কাজ করতে হবে । আর বিভাজন শুরু হয় । সেই বিভাজন এখনো বিদ্যমান । সাইয়েদ আহমদ বেরলবী মনে করেন তাওহিদের দিকে আহবান এবং চরিত্রের সংশোধন আল্লাহর বন্দেগী, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করাই একমাত্র কাজ হওয়া উচিত। যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলে অন্যরা উনাকে ওহাবী বলতেন।

মাওলানা কারামত আলী  জৈনপুরী  বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য ভূমিকা পালন করেন তিনি ইংরেজদের সহযোগিতা করেন এবং পরবর্তীতে ইংরেজরা জুমা ও ঈদের নামাজ আদায়েকে বৈধতা দেন। কৌশলগত কারণে মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন না হয় তার জন্যই ব্রিটিশদের সমর্থন দেন।
১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে আলিয়া মাদ্রাসা হয় যা ব্রিটিশদের  সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় । মোল্লা মাজদুদ্দিনের নেতৃত্বে পাটক্রম প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে সময়ের প্রয়োজনে প্রত্যেক জেলাতে জেলাতে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারি মাদ্রাসা হিসেবেই পরিচিত এই মাদ্রাসাগুলো এখানের আলেমগণ ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায়ও শিক্ষিত।
দেওবন্দের ভিন্ন ভিন্ন মতের আলেমগণের অনুসারীরা আলিয়ার আলেমগণের অনুসারীগন সুন্নীতের আলেমগনের আকিদাগত মতপার্থক্য থাকলেও ইসলামের মূল বিষয়ে কোন  মতপার্থক্য নেই। তবে আকিদাগত সমালোচনা উনারা করে থাকেন।
বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর  দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমগন, আলীয়া মাদ্রাসায় আলেমগণ, সুন্নি আলেমগণের প্রভাব লক্ষণীয়। বর্তমানে ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়েও ওনাদের মতামতের প্রভাব লক্ষণীয়। মুসলমানদের কাছে, কট্টরপন্থী এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন মতালম্বী আলেমগনও তাদের মতামত  দিচ্ছেন।  এতে করে পক্ষ-বিপক্ষের মতামত তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সূফী আল্লাহর ওলীদের মাজার ভাঙছে ভিন্ন ভিন্ন অনুসারী তৈরি হচ্ছে। যা মুসলমান দেশ এবং জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসকদের সময়েও সনাতন ধর্মের চর্চা অব্যাহত থাকে। মুসলমান শাসকগণ সংখ্যালঘু হওয়ায় তারা ধর্মীয় কোন বিষয় মনোযোগ না দিয়ে শাসন কার্য দীর্ঘায়ুর দিকে মনোযোগ  বেশি দিতে থাকে। এতে করে ধর্মীয় দাঙ্গার সৃষ্টি হয়নি।  ব্রিটিশ শাসনামলে সর্বপ্রথম মুসলমানরা বিদ্রোহ করে এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও যুক্ত ছিল পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সংগঠন গঠন হতে থাকে।
হিন্দু সম্প্রদায়িক সংগঠন এবং মুসলিম সম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো মূলত ধর্মীয় উন্মাদনের জন্য দায়ী। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ভারতবর্ষে প্রথমে ”স্বয়ং সেবক সংঘ” তারা চেয়েছিল ব্রিটিশদের ব্যবহার করে মুসলমানদের বিতাড়িত করতে। যেভাবে বিতাড়িত করেছিল বৌদ্ধ ধর্মের মানুষকে। অনেক ইতিহাসবিদ দের মতে ব্রাহ্মণ্যবাদীরাই বুদ্ধদের এ উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। কিন্তু সনাতনীরা তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম এক হয় লড়াইয়ে। চিন্তিত ব্রিটিশরা কৌশলে ধর্মীয় সংগঠনগুলো দিয়ে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর একে অন্যের শত্রুতে পরিণত করার চেষ্টায় থাকেন। এবং তার ফলাফল ভারতীয় কংগ্রেস এবং মুসলমান লীগ তার পরবর্তীতে ১৯৪৭  সালে ভারত পাকিস্তান। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে মুসলমান। ধর্মের ভিত্তিতে  পাকিস্তান বেশি দিন টেকেনি নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশে যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও রয়েছে।বাংলাদেশে  মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এখানে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ায় এখানের মুসলমান সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো আর ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক  সংগঠনগুলো। এই সংগঠনগুলোর ধর্মীয়  উন্মাদনার প্রভাব পরে বাংলাদেশের মুসলমানদের আর ভারতের হিন্দুদের। এই উন্মাদনার ইতিহাস শত শত বছরের। এই উন্মাদনা থেমে গেলে কি ধর্ম থেমে যাবে? নাকি উন্মাদনা ছাড়া ধর্মীয় ব্যাপ্তি হয় না। উপরওয়ালা হয়তো হাসছেন, দেখছেন, হাসছেন।

………… প্রকাশক ও সম্পাদক  আসাদুজ্জামান আরমান 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ধর্মীয় উন্মাদনা গ্রাস করেছে জাতিকে

আপডেট সময় : ০৮:১৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

ভারতীয় উপমহাদেশে সনাতন ধর্ম প্রাচীন এবং আদি ধর্ম বলা চলে কেননা অধিকাংশই সনাতন ধর্ম অনুসরন করতো পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের বিসৃতি ধটে তন্মধ্যে ইসলাম ধর্মের ব্যপকতা এবং বৃদ্ধি অনেক বেশি পায় । সনাতন ধর্মের অনুসারিরা অর্থ্যাৎ হিন্দুরা ছিল বহুভাগে বিভক্ত, মূলত চারটি সম্প্রদায় থাকলেও শাখা , প্রশাখা, উপশাখায় বিভক্ত।  ব্রাক্ষ্মন, শুদ্র ক্ষত্রিয় ,বৈষ্ণব মূল এই চার শাখার সম্প্রদায় । শাখা প্রশাখার মধ্যে যেমন ঠাকুর , আচার্য্য বন্দোপাধ্যায় , চট্টোপাধ্যায় , গুপ্ত, সাহা, পাল , কায়স্থ , সেন , হালদার ,চান্দেল, পল্লব ,ভট্ট, চানুক্য, পান্ড্য , চেরা , দাস নানা গোত্রে বিভক্ত। এরা এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের রয়েছে মানসিক  দূরত্ব । এই গোত্র গুলো সময়ের সাথে সাথে উচ্চদের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে। কারণ উচ্চ গোত্রগুলোর একসময় আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল।  তারা নির্ধারন করে দিতো কর্ম , সেই কর্মের মানুষরা আলাদা আলাদা নাম এবং নির্ধারিত স্থানে বসবাস করতো । প্রত্যেক শ্রেণির আলাদা আলাদা রীতিনীতি অনুসরন করত , একটা সময় ছিল এক গোত্রের মানুষ অন্য গোত্রের মানুষের সাথে বিয়ে কিংবা বাড়িতে পর্যন্ত খাবার খেত না  যদিও সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিল এবং ভারত উপমহাদেশে বসবাস করত। সনাতন ধর্মের অনুসারীরাই এই ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকাকে নিজেদের রাজ্য বানিয়ে শাসন করেন দীর্ঘ দিন । সর্বপ্রথম আরব শাসক মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে এই উপমহাদেশে আসলেও বছর কয়েকের বেশি টেকেনি । পরবর্তীতে সেই পূর্বের ন্যায়ই সবই চলছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রেণিগুলো আরো বেশি শক্তি সঞ্চয় করল ,তাদের গোত্র গুলোর নিয়ম কানুনও কঠিনতর হতে লাগলো অন্যদিকে মাঝে মাঝে নিচু বংশের লোকজন বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রতিবাদী হলেও তা কাজ আসে নি । এতে উঁচু নিচুর ভেদাভেদ বেড়ে যেতে লাগলো ব্রাক্ষ্মণরা পূজনীয়  স্থানে চলে গেল। সনাতন ধর্মের শুরুতে বেদ , গীতা অনুসরন থেকে আস্তে আস্তে অনেক রাজ্যে মা দূর্গা শিব কালীপূজা এবং বিভিন্ন ধরনের পুজা শুরু হয় । দুর্গা পুজা সর্বপ্রথম কপোতাক্ষের তীরে প্রাচীন বুড়ন দ্বীপ কিসান উথালী নামক স্থানে শুরু হয় । গবেষনায় দেখা যায় ১০৭৬ বঙ্গাব্দে দূর্গাপূজার সর্বপ্রথম হিসাব খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে পূজার খরচ লিপিবদ্ধ আছে , তবে সঠিক হিসাব না থাকলে ও দূর্গাপূজা ৩৫০ বছর পুরোনো বলে ধারনা করা যায় । কালী পুজা হবার কোন নমুনা কিংবা ইতিহাস ১৬শ খ্রিষ্টাব্দের আগে খুঁজে পাওয়া যায় নি । ১৭শ শতাব্দীর দিকে মঙ্গলকাব্যে ভক্তিমূলক দেবী কালীর উপস্থিত পাওয়া যায় । রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনামলে কালীপূজার ব্যপকতা বৃদ্ধি পাইয় এবং সময়ের সাথে সাথে ধর্মীয় উপসনানয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে । সনাতন ধর্ম অনুসারীদের পুজা পালন ধর্মীয় প্রার্থনায় অধিক গুরুত্ব পেতে থাকে। পূজাকে গুরুত্ব সহকারে বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মনে করা হয় । প্রকৃতির পূজায় মানুষ তাদের সত্তাকে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি,তুষ্ঠি লাভ করে। তিন হাজার বছর ধরে পুজার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পূজার অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ধরা হলেও, এর মূল অর্থ শ্রদ্ধা। আর এই পূজা প্রথমে প্রকৃতি থেকে শুরু হয় আর যাহা শক্তির পূজা। বাঙ্গালীদের মধ্যে কালী, কামেশ্বরী,জগদ্ধাত্রী্, গন্ধেশ্বরী, অন্নপূর্ণা্ , বিপদনাশিনী , সন্তোষী মাতা , মা দুর্গাকে শক্তি হিসেবে পূজা করা হয়। বাংলাদেশের সনাতনী মানুষ দুর্গাপূজাকে ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তুলে ধরে উৎসবে রূপান্তরিত করে। আর এই দুর্গাপূজায় তিনি যে একজন সনাতনী তাঁর প্রতিকি বহিঃপ্রকাশ পায় ।সনাতনীদের আবেগ , ভালবাসা , শ্রদ্ধা এটিকে ঘিরে ।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারণা সর্বপ্রথম হযরত মুহাম্মদ (সা.)  এর আমলে আরব বণিকরা শুরু করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে হযরত উমর (রা.) খেলাফতের সময় আল হাকিম (রা) ও মুগিরা (রা) সহ বেশ কয়জন সাহাবী সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। আয়তন ইউরোপের সমান এই ভারতীয় উপমহাদেশ নিয়ে আরবীয়ানদের আগ্রহ কম ছিল না।
আরবে ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসাহিক উদ্দেশ্যে এসে ইসলামের দাওয়াত দিতেন উপকূলীয় অঞ্চলে। যার প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন মসজিদ এখনো রয়েছে। যেমন রংপুরের লালমনিরহাটে সাহাবা মসজিদ। চট্টগ্রামে আবু ওয়াক্কাস (রা) মসজিদ।
ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হন বেশিরভাগ সুফি , সাধক ,  আল্লাহর ওলিদের খোদাভীরুতা  আচার আচরণে মুগ্ধ হয়ে।  যাদের মধ্যে অন্যতম হযরত শাহজালাল (রা)। ইয়েমেন থেকে ৩৬০ জন  আওলিয়া নিয়ে উপমহাদেশে এসে ইসলামের নবজাগরণ করেন হযরত শাহ পরান (র) , বায়োজিত বোস্তামি (র) , শাহ সুলতান রুমি (র) , বাবা আদম শহিদ (র) , শেখ ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকর (র)  , শেখ শরিফ উদ্দিন আবু তত্তমা  উল্লেখযোগ্য। আরবদের মধ্যে অনেকে এসেছিলেন ব্যবসায়িক কাজে,অনেকে আরব ভারত উপমহাদেশ বিজয়ের উদ্দেশ্যে।  তবে এই সুফিরা এসেছিলেন দ্বিনের  দাওয়াত দিতে ইসলামের পতাকা উড়াতে । আর উনারাই মানুষকে আকৃষ্ট করে ইসলামের পক্ষ দলে দলে নিয়ে আসেন।  ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলমানরা ১২০১ থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত শাসন করেন । মুসলমানরা সংখ্যালঘু হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ,বৌদ্ধ ,  খ্রিষ্টান সহ অন্যান ধর্মাবলম্বীরা মেনে নেয় এই সময়ের শাসকেরা ইসলাম ধর্ম প্রচার থেকেও তাদের রাজ্য পরিচালনাকে অতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাদের বংশ পরম্পরায়  শাসন ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য করণীয় গুলোকে গুরুত্ব সহকারে দেখতেন ।অন্যদিকে সুফি, সাধক,  আউলিয়া,  আল্লাহর ওলিরা ধর্ম প্রচার করতেন । আর এই সুফিসাধকের অনুসারীরা ছিলেন সবাই একেক অঞ্চলের একেকজন আল্লাহর অলিদের দাওয়াতের ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে আল্লাহর অলিদের কাছ থেকে ইসলামের বায়াত নেওয়ার কারণে একেক অঞ্চলে এই অলিদের ভক্তের সংখ্যা প্রচুর।   পীর মুর্শিদের যুগের পর যুগ অনুসরণ করে ইসলাম ধর্ম পালন করতেন সাধারণ মুসলমান।
ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে দখল করে নিলে ভারতের মুসলমানরা বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে এই নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ১৮৫৭- ১৮৮০ সালে সৈয়দ আহমদ বেরলবীর মুজাহিদুন  আন্দোলনের অনুসারীরা আহলে হাদিস আন্দোলন শুরু করেন । আহলে হাদিসের অনুসারী মুসলমানদের দাবি কুরআন এবং সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোন কিছু অনুসরণ প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ কোন মাহজার  অনুসরণের প্রয়োজন নেই তবে তাদেরকে অন্যেরা নামাহারি ওহাবী বলে চিহ্নিত করেন।
ভারতে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ । ১৮৬৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় মুসলমানদের সঠিক পথ দেখানোই একমাত্র উদ্দেশ্য এই প্রতিষ্ঠানটির । এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক আলেম ওলামার সৃষ্টি হয় । ভারতীয় উপমহাদেশে যারা বিভিন্ন সময় ভূমিকা রেখেছেওন এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ আলেম হানাফি মাঝারের অনুসাড়ী , মালেকি হাম্বলি মাজহাবকেও বিশুদ্ধ মনে করেন । চিশ্তিয়া , নকশবন্দিয়া , কাদেরিয়াহ ও সোহরাওয়ার্দিয়া সিলসিলাকেও অনুসরন করেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বার বার ব্যার্থ হয়ে দেওবন্দের আলেমগন বিভিন্ন ভাগে বিভিক্ত হয়ে পড়েন একদল আলেম মনে করেন ব্রিটিশদের বিরোধীতাই করতে হবে , আরেকদল মনে করেন আমাদের ঈমান মজবুত করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত , আরেকদল আলেম মনে করেন , ব্রিটিশদের সাথে থেকে জ্ঞান , বিজ্ঞান এবং ইসলামের মুসলমানদের উন্নয়নে অগ্রসরে কাজ করতে হবে । আর বিভাজন শুরু হয় । সেই বিভাজন এখনো বিদ্যমান । সাইয়েদ আহমদ বেরলবী মনে করেন তাওহিদের দিকে আহবান এবং চরিত্রের সংশোধন আল্লাহর বন্দেগী, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করাই একমাত্র কাজ হওয়া উচিত। যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলে অন্যরা উনাকে ওহাবী বলতেন।

মাওলানা কারামত আলী  জৈনপুরী  বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য ভূমিকা পালন করেন তিনি ইংরেজদের সহযোগিতা করেন এবং পরবর্তীতে ইংরেজরা জুমা ও ঈদের নামাজ আদায়েকে বৈধতা দেন। কৌশলগত কারণে মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন না হয় তার জন্যই ব্রিটিশদের সমর্থন দেন।
১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে আলিয়া মাদ্রাসা হয় যা ব্রিটিশদের  সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় । মোল্লা মাজদুদ্দিনের নেতৃত্বে পাটক্রম প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে সময়ের প্রয়োজনে প্রত্যেক জেলাতে জেলাতে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারি মাদ্রাসা হিসেবেই পরিচিত এই মাদ্রাসাগুলো এখানের আলেমগণ ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায়ও শিক্ষিত।
দেওবন্দের ভিন্ন ভিন্ন মতের আলেমগণের অনুসারীরা আলিয়ার আলেমগণের অনুসারীগন সুন্নীতের আলেমগনের আকিদাগত মতপার্থক্য থাকলেও ইসলামের মূল বিষয়ে কোন  মতপার্থক্য নেই। তবে আকিদাগত সমালোচনা উনারা করে থাকেন।
বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর  দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমগন, আলীয়া মাদ্রাসায় আলেমগণ, সুন্নি আলেমগণের প্রভাব লক্ষণীয়। বর্তমানে ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়েও ওনাদের মতামতের প্রভাব লক্ষণীয়। মুসলমানদের কাছে, কট্টরপন্থী এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন মতালম্বী আলেমগনও তাদের মতামত  দিচ্ছেন।  এতে করে পক্ষ-বিপক্ষের মতামত তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সূফী আল্লাহর ওলীদের মাজার ভাঙছে ভিন্ন ভিন্ন অনুসারী তৈরি হচ্ছে। যা মুসলমান দেশ এবং জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসকদের সময়েও সনাতন ধর্মের চর্চা অব্যাহত থাকে। মুসলমান শাসকগণ সংখ্যালঘু হওয়ায় তারা ধর্মীয় কোন বিষয় মনোযোগ না দিয়ে শাসন কার্য দীর্ঘায়ুর দিকে মনোযোগ  বেশি দিতে থাকে। এতে করে ধর্মীয় দাঙ্গার সৃষ্টি হয়নি।  ব্রিটিশ শাসনামলে সর্বপ্রথম মুসলমানরা বিদ্রোহ করে এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও যুক্ত ছিল পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সংগঠন গঠন হতে থাকে।
হিন্দু সম্প্রদায়িক সংগঠন এবং মুসলিম সম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো মূলত ধর্মীয় উন্মাদনের জন্য দায়ী। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ভারতবর্ষে প্রথমে ”স্বয়ং সেবক সংঘ” তারা চেয়েছিল ব্রিটিশদের ব্যবহার করে মুসলমানদের বিতাড়িত করতে। যেভাবে বিতাড়িত করেছিল বৌদ্ধ ধর্মের মানুষকে। অনেক ইতিহাসবিদ দের মতে ব্রাহ্মণ্যবাদীরাই বুদ্ধদের এ উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। কিন্তু সনাতনীরা তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম এক হয় লড়াইয়ে। চিন্তিত ব্রিটিশরা কৌশলে ধর্মীয় সংগঠনগুলো দিয়ে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর একে অন্যের শত্রুতে পরিণত করার চেষ্টায় থাকেন। এবং তার ফলাফল ভারতীয় কংগ্রেস এবং মুসলমান লীগ তার পরবর্তীতে ১৯৪৭  সালে ভারত পাকিস্তান। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে মুসলমান। ধর্মের ভিত্তিতে  পাকিস্তান বেশি দিন টেকেনি নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশে যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও রয়েছে।বাংলাদেশে  মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এখানে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ায় এখানের মুসলমান সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো আর ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক  সংগঠনগুলো। এই সংগঠনগুলোর ধর্মীয়  উন্মাদনার প্রভাব পরে বাংলাদেশের মুসলমানদের আর ভারতের হিন্দুদের। এই উন্মাদনার ইতিহাস শত শত বছরের। এই উন্মাদনা থেমে গেলে কি ধর্ম থেমে যাবে? নাকি উন্মাদনা ছাড়া ধর্মীয় ব্যাপ্তি হয় না। উপরওয়ালা হয়তো হাসছেন, দেখছেন, হাসছেন।

………… প্রকাশক ও সম্পাদক  আসাদুজ্জামান আরমান