একটি যোক্তিক আন্দোলন এবং সহিংসতা
- আপডেট সময় : ১২:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
কোটা যেমন সাংবিধানিক অধিকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে অগ্রসর করার জন্য ঠিক তেমনি তার অধিক মাত্রা দক্ষ-মেধাভিত্তিক জাতি গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ।যদিও আপনি প্রাথমিক, লিখিত পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ন হওয়ার পর শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় কোটার আওতায় থাকবেন।
বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্মের পর থেকেই বায়ান্ন বছরে কোটা চলমান ।এটি নিয়ে বিভিন্ন সময় তর্ক বিতর্ক থাকলেও ২০১৮ সালে একটি শক্তিশালী আন্দোলনের মুখে জাতীয় সংসদে সরকার এটাকে বাতিল করে ।পরবর্তীতে বাতিলের বিপক্ষে আদালতের দারস্থ হলে আদালত তার রায় দেয় ।আবার শুরু হয় আন্দোলন যদিও শুরুতে সীমিত মনে হলেও পরবর্তীতে সারা দেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ।সাধারন শীক্ষার্থীরা অংগ্রহন করতে থাকে এখানে তাদের স্বার্থ বরাবর তারা মনে করেছে কোটার কারনে তাদের চাকুরি হচ্ছে না । তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বঞ্চনার কারণেই তারা সবাই রাস্তায় নেমে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হলো।হল গুলোও বন্ধ হলো কিন্তু আন্দোলন বন্ধ হলো না।বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা সামনে চলে আসল, নিহত হলো ।এরই মধ্যে ছাত্রদল ,ছাত্রশিবির সমর্থন এবং শতভাগ মাঠে নেমে আসলো ।প্রধান মন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন পরোক্ষভাবে আন্দোলনকারীদের পক্ষে গেলেও আন্দোলন থামলো না ।বি,এন,পি জামাত তাদের স্বার্থ হাসিলে সরকার পতন আন্দোলনে নিয়ে গেল ।ইতিমধ্যে ছাত্র আন্দোলনকারীরা মাঠে না থাকলেও আন্দোলন চলতে থাকল, তা আর নিয়ন্ত্রনে থাকলোনা । গাড়ি পোড়ানো হলো ।বাস পোড়ানো হলো ।সেতু ভবনের ১ম,২য়,৩য় তলা পুড়িয়ে দেওয়া হলো ।গাড়ি গুলো(প্রায় ৫৩টি)ছাই হয়ে গেলো ।অনেক জেলা শহরের পৌর ভবন ভাংচুর সহ থানা ও বিজেবি ক্যাম্পে হামলা ভাংচুর করা হলো ।এদিকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে ছড়িয়ে পড়লো,খালেদা জিয়া মৃত্যু বরণ করলো ।এটিকে বিভিন্ন মিডিয়া গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও সাধারন মানুষের ধারনা হতে লাগলো খালেদা জিয়া মৃত ঘোষনা দিচ্ছে না ।আই সি ইউ তে রেখে দিয়েছে । অন্যদিকে প্রশাসনের কঠোরতা এবং আন্দোলনের নামে সহিংসতার মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক, চিন্তিত নাগরিক , চিন্তিত সরকার ,উজ্জীবীত বি,এন,পি ও জামাত। আওয়ামীলীগের লুটেরাদের একাংশ হিসাব মেলাচ্ছে অন্য অংশ মামলা হামলার ভয় সাথে সরকার পতন । আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের সেচ্ছাচরিত্রা পারিবারিক রাজনীতীকে অগ্রাধীকার ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে প্রকৃত আওয়ামীলীগ নেতাদের বঞ্চিত করায় আওয়ামীলীগের একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী নিশ্চুপ। অনলাইন এবং রাজপথ কোথাও তাদের উপস্থিতি নেই তারা ভাবছে তারা সুবিধা বঞ্চিত যারা সুবিধা নিয়েছে তারা কোথায় ?
যে সহিংসতা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা অকল্পনীয় । মেট্রোরেলের মত যুগোপযোগী এবং প্রয়োজনীয় রেলে যখন আগুন দেওয়া হয় তখন বুঝা যায় যে, এটি কোন কোটার আন্দোলন নয় ।এটি জিন্মি করে ক্ষমতায় যাওয়ার নেশা ।এই নেশা প্রতিটি মানুষের মধ্যে যখন জেগে উঠে তখন পক্ষে বিপক্ষে মুখোমুখি হয়ে যায় ।একে অন্যের প্রথমে মুখে তারপর হাতে আর পরে অস্ত্রে ভাষায় চলে ।সরকারের অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও একটি আন্দোলন যখন সহিংসতায় চলে যায় তখন বৈধ অবৈধ প্রত্যেক অস্ত্রের ক্ষমতা সমান হয়ে যায় । লাশ পড়ে থাকে অলিতে গলিতে । লাশ পড়লেই রাজনৈতিক পায়দা পায় যারা তারাও লাশ পালায়। সরকার ও লাশ পালায় লাশের সংখ্যায় নাগরিকদের প্রাণ কাদায় ।কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়ে গেল সরকার বাতিলের আন্দোলন । সহিংসতা বাড়তে লাগলো ।কারফিউ দেওয়া হলো । রবিবার সকাল ১০ টায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ ব্যাঞ্চ পক্ষে বিপক্ষে সকলের কথা শুনে রায় দিল ৭% কোটা থাকবে ( মুক্তিযোদ্ধা ৫% নাতিরা থাকছেনা , ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ১% ,প্রতিবন্ধি এবং ৩য় লিঙ্গ ১%)।
এই রায়ের পর বাকি দাবি দাওয়া পরবর্তী ৫ দফার জন্য তাদের আপত্তি থেকে গেল। অন্যদিকে কারফিউ চলল অনির্দিষ্টকালের জন্য । মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা অনগ্রসর কিংবা অগ্রভাগে থেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশ মাতৃকাকে ।তাদের সন্তান , নাতি পোতারা এই ৫% এ থাকবে না হাইকোর্টের এমন রায় সাধারন মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হলো ।কিঞ্চিৎ আফসোস আছে তাদের , তারা মনে করে ১৫ থেকে ২০ পর্যন্ত কোটা থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু ৩য় যে ধারা ক্ষমতার নেশা তাদের কি হবে ? তারাতো আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । এটা তাদের সুবর্ণ এবং সর্বাপেক্ষা সফলতার সম্ভাবনার এই আন্দোলন।এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তাদেরকে ক্ষমতার দিকে নিয়ে যাবে । তারা এই আন্দোলনে তাদের সরকার গঠনের স্বপ্ন বাস্তবের অনেক কাছাকাছি । অন্যদিকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ।অনেকে বলেন তিনি মারা গেছেন ,শুধুমাত্র ঘোষণা আসা বাকি ।তার আত্নীয় কিংবা নেতা কর্মী কাউকেই হাসপাতালে তার সাথে দেখা করতে দিচ্ছেনা। অন্যদিকে কারফিউ অনির্দিষ্টকাল হওয়ায় একেকজন একেক রকম ধারনা করছে ।যদিও খালেদা জিয়ার ব্যাক্তিগত ডাক্তার বলেছেন ওনার অবস্থা স্থিতিশীল ।মানুষের মনে ৩য় পক্ষের আবির্ভাবের সম্ভাবনার ধারনা ও আছে অর্থ্যাৎ সেনাশাসন ।জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই ।কি ঘটছে না ঘটেছে , ইন্টারনেট নেই BTCL এ ভাংচুর করা হয়েছে। মানুষের মুঠোফোনে কথাবলা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই । ঘরের মহিলারাও বিরক্ত তারা নেট চায় আন্দোলনের সফলতা কিংবা ব্যার্থতা তাদের কিছু যায় আসে না। ইন্টারনেট বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদায় রূপান্তরিত হয়েছে ।একটি সমাধানকৃত ইস্যু আজ সকলের ভোগান্তি এবং সকলের জীবনের অংশ হয়ে দাড়িয়েছে ।সকলেই এখন এই আন্দোলনের পক্ষে বিপক্ষের মতামতের অংশীদার ।অর্থ্যাৎ সবাই দেশের অংশ দেশের কার্যপ্রণালীতে কতটা যুক্ত তারা তা বুঝতে পারছে ।রাষ্ট্রের সুবিধা তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কতভাবে নিচ্ছে বা পাচ্ছে তারা তা এখন টের পাচ্ছে। রাষ্ট্র জনগনের। জনগন রাষ্ট্রের তা এখন প্রমাণিত। আগামীদিনের বাংলাদেশ শান্তি শৃঙ্খলায় ও সুখে শান্তিতে বসবাসই একমাত্র আগ্রহ।
***আসাদুজ্জামান আরমান , সম্পাদক ও প্রকাশক , দৈনিক জাতীয় নূর।