সংবাদ শিরোনাম ::
আশি বছরের বৃদ্ধাকে জবাই করে হত্যা ,ঘটনা উদ্ঘাটন ।
News Desk
- আপডেট সময় : ০২:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪ ১০৩ বার পড়া হয়েছে
সুবর্ণ চরের ০১ নং চরজব্বর ইউনিয়নের চররশিদ গ্রামে ৮০ বছরের বৃদ্ধকে জবাই করে হত্যা করা হয় ।এর আগেও একাদিক হত্যাকাণ্ড ঘটে এই ইউনিয়নে ।হত্যাকাণ্ডটি ছিল পুরাপুরি পরিকল্পিত নোয়াখালী জেলা পুলিশের প্রেস বিফিং থেকে জানা যায় ।
আব্দুল খালেক প্রকাশ খাজা মিয়াকে (৮০) স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিজ বাড়ির প্রবেশের রাস্তায় গত ০৬/০৭/২০২৪ইং তারিখ দিবাগত রাতের অন্ধকারে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা জবাই করে গলা কাটা লাশ ফেলে রেখে যায়। পরদিন সকালে ভিকটিম খাজা মিয়ার স্ত্রী কমলা বেগম ফজর নামাজের পর স্বামীকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির সামনে স্বামী আব্দুল খালেক প্রকাশ খাজা মিয়ার গলা কাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করলে আশেপাশের মানুষ এগিয়ে এসে লাশ দেখতে পেয়ে চরজব্বর থানা পুলিশকে জানায় এবং পুলিশ লাশ উদ্ধার করে তাৎক্ষনিক হত্যার কোন কারন এবং ঘাতকদের নাম না জানলেও পরবর্তীতে ,
নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিপিএম, পিপিএম মহোদয় চাটখিল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জনাব নিত্যানন্দ দাসের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা জনাব নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও অফিসার ইনচার্জ চরজব্বর থানা জনাব মোঃ কাওসার আলম ভূঁইয়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দীন, এসআই (নিঃ) আঃ আলীম, এসআই (নিঃ) মোঃ মতিউর রহমান মোল্লা, এসআই (নিঃ) ত্রিদীপ বড়ুয়া, এসআই (নিঃ) আনছার উল্লাহ সহ একাধিক আভিযানিক টিম গঠন করেন। আভিযানিক দল সমূহ এলাকায় ভাগ হয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায় খাজা মিয়ার মৃত্যুর দুই দিন পূর্বে তাহার ছোট ছেলে আব্দুল্যাহর মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে এবং তাহার বাবাকে মেরে ফেলবে বলেন পুলিশ উক্ত মোবাইল নম্বরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী (২৯) কে সনাক্ত করে তাহাকে গ্রেফতার করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আইয়ুব আনছারী (২৯) এই হত্যাকান্ডে তাহার সহযোগী হিসেবে আব্দুল হাকিম (২৩) এর নাম প্রকাশ করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ ঐ দিনই অভিযান পরিচালনা করিয়া সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিমকে কাঞ্চন বাজার এলাকা থেকে আটক করে। থানা পুলিশ তাহাদের দুইজনকে বিজ্ঞ আদালতের সম্মুখে উপস্থাপন করে এবং বিজ্ঞ আদালত আইয়ুব আনছারীর ০৪ দিন এবং আব্দুল হাকিম এর ০৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ রিমান্ডে থাকা সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিম (২৩), একপর্যায়ে পুলিশের কাছে আরো একজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেয়। তাহার দেয়া তথ্য মতে আভিযানিক দল পশ্চিম চরজব্বর এলাকা থেকে অপর সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ রাজু (২২) কে আটক করে। রাজুকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাজু পুরো ঘটনাটি তদন্তকারী দলের নিকট স্বীকার করে। গত ০৫/০৭/২০২৪ইং তারিখ রোজ শুক্রবার মাগরিবের পর অনুমান ১৯.৩০ ঘটিকার দিকে আইয়ুব আনছারী এর উদ্যোগে স্থানীয় কাঞ্চন বাজারে স-মিলের সামনে তাহারা তিনজন একত্রিত হয়। আইয়ুব আনছারী তাদের দুইজনকে জানায় যে, চরজব্বর থানার মামলা নং— ০২, তারিখ-০৭/০৮/২০২০, ধারা১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০২/৩০৭/৩৪/৪৪৮ পেনাল কোড এর বাদী শফিকের সাথে মামলার বিষয়ে কথা হয়েছে। শফিক আইয়ুব কে আব্দুল খালেক প্রঃ খাজা অথবা খাজার ছোট ছেলে আব্দুল কে শায়েস্তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। যদি আইয়ুব শফিকের সাথে থাকে তাহলে ঐ মামলার বাদী শফিক আইয়ুবকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করিবে। সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী শফিকের এই প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে আব্দুল খালেক প্রঃ খাজা অথবা খাজার ছোট ছেলে আব্দুল কে মেরে ফেলার ছক আঁকতে শুরু করে। সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী অপর দুইজনকে আব্দুল খালেক প্রঃ খাজা মিয়াকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা জানায় এবং কে কি দায়িত্ব পালন করিবে তাহা বন্টন করে দেয়। সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিম কে দায়িত্ব দেওয়া হয় কাঞ্চন বাজারে ভিকটিমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য। বিনিময়ে আইয়ুব আনছারী আব্দুল হাকিমকে নগদ ২,০০০/— ( দুই হাজার) টাকা দেয় এবং কাজ হয়ে গেলে আরো টাকা দিবে মর্মে জানায়। অপর সহযোগী রাজু কে পরবর্তীতে ৫,০০০/— (পাঁচ হাজার) টাকা দিবে বলে আশ্বস্থ করে। ঘটনার দিন গত ০৬/০৭/২০২৪ ইং তারিখ রোজ শনিবার বিকাল অনুমান ১৬.০০ ঘটিকা হইতে সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিম কাঞ্চন বাজারে ভিকটিমকে খোঁজাখুজি শুরু করে। মাগরিবের নামাজের পর সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিম খাজা মিয়াকে জিরোপয়েন্টে দেখতে পেয়ে বিষয়টি আইয়ুব আনছারীকে জানায়। এর কিছুক্ষণ পর অনুমান ২০.১০ ঘটিকার সময় ভিকটিম আব্দুল খালেক প্রঃ খাজা মিয়াকে আবুল কালাম এর সহিত জিরো পয়েন্টে দেখে নিশ্চিত হয়ে ভিন্নপথে দ্রুততম সময়ে পূর্ব হইতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন মাদ্রাসার সামনে থাকা আইয়ুব আনছারীর সহিত অনুমান ২০.৩০ ঘটিকার সময় গিয়ে মিলিত হয়। এর ২/৩ মিনিট পর অপর সহযোগী সন্দিগ্ধ আসামী রাজু সেখানে উপস্থিত হয়। পরবর্তীতে তিনজনই ভিকটিম আসার অপেক্ষায় ভিকটিম খাজা মিয়ার বাড়ির প্রবেশের রাস্তায় খড়ের স্তুপের পিছনে উৎ পেতে থাকে। ভিকটিম আব্দুল খালেক প্রঃখাজা তাহার একই এলাকার প্রতিবেশী আবুল কালাম সহ স্থানীয় কাঞ্চন বাজার হইতে পায়ে হেটে বাড়ি ফেরার পথে অনুমান ২০.৫০ ঘটিকার সময় ভিকটিম আব্দুল খালেক প্রঃ খাজা মিয়া সঙ্গীয় আবুল কালামকে বিদায় দিয়ে তাহার বাড়ী প্রবেশের রাস্তা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশের পথে খড়ের স্তুপের কাছে পৌঁছাইলে পূর্ব হইতে উৎ পেতে থাকা হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আইয়ুব আনছারী (২৯) খড়ের স্তুপের পিছন থেকে বের হয়ে ভিকটিমকে আক্রমণ করে। সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী ডান হাত দিয়ে ভিকটিমের সামনে থেকে গলা চাপ দিয়ে ধরে এবং বাম হাত দিয়ে ভিকটিমের পিঠে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতের ফলে ভিকটিম আব্দুল খালেক প্রঃ খাজা এর হাতে থাকা বেতের লাঠিটি পড়ে গেলে ভিকটিম মাটিত লুটিয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী ভিকটিমের তলপেটের বাম পার্শ্বে
দুইবার ছুরিকাঘাত করে। তখন খড়ের স্তুপের আঁড়ালে থাকা অপর সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিম (২৩)ও মোঃ রাজু (২২) এসে সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী এর নির্দেশে সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুল হাকিম (২৩)ভিকটিমের বাম হাত মাটিতে চাপিয়া ধরে এবং সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ রাজু ভিকটিমের মাথা চাপিয়া ধরিলে সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী (২৯) ভিকটিমের বুকের উপর হাঁটু গেড়ে বসে ডান হাত দিয়ে ভিকটিমের গলার সামনের অংশে ছুরি চালিয়ে জবাই করিয়া হত্যা করে। সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারী তাহার হাতে থাকা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিতে লেগে থাকা রক্ত ভিকটিমের গায়ে থাকা পাঞ্জাবীতে মুছে অপর দুইজন আসামী সহ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সন্দিগ্ধ আসামীগণ ভিকটিমের বাড়ির উপর দিয়ে সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারীর বাড়ির পার্শ্বে মসজিদের পুকুরের ঘাটে গিয়ে তিনজনই হাতমুখ ধুয়ে নেয়। আসামী আইয়ুব আনছারী তাহার সাথে থাকা সন্দিগ্ধ আসামী হাকিম ও সন্দিগ্ধ আসামী রাজুকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যেতে বলে। আভিযানিক দল পুলিশ রিমান্ডে থাকা আইয়ুব আনছারীর দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারের নিমিত্তে আইয়ুব আনছারীর বাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনা কালে আইয়ুব আনছারীর দেওয়া তথ্য মতে তাহার রান্না ঘরের কাঠের সিলিং এর উপর হইতে (ক) ০৫ টি কাঠের বাটযুক্ত স্টিলের কিরিচ (তরবারী) (খ) ০২ টি স্টিলের হাতল যুক্ত স্টিলের কিরিচ (তরবারী), (গ) ০১ টি কাঠের বাটযুক্ত লোহার ছোরা, (ঘ) ০১টি লোহার তৈরি কাটার উদ্ধার করিয়া জব্দ করা হয়। উক্ত বিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) আব্দুল আলীম বাদী হয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামী আইয়ুব আনছারীর বিরুদ্ধে চরজব্বর থানার মামলা নং— ১১, তারিখ— ১২/০৭/২০২৪ইং, ধারা— ১৮৭৮ ঞযব অৎসং অপঃ ১৯(ভ) দায়ের করে। আইয়ুব আনছারীর বসত বাড়ী হইতে হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার না হওয়ায় তাহাকে থানায় এনে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তাহার বাড়ী সংলগ্ন মসজিদের পুকুর ঘাটে হাত মুখ ধোয়ার সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। অপর ধৃত সন্দিগ্ধ আসামী রাজুর দেখানোমতে তাহার নিজ বাড়ী হইতে ঘটনার সময় পরিহিত শার্ট ও প্যান্ট গ্রেফতারের জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ইং ১৪/০৭/২০২৪ ইং তারিখ সকাল ০৫.১৫ ঘটিকার সময় সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আনছারীর দেওয়া তথ্যমতে চররশিদ সাকিনে তাহার বাড়ি সংলগ্ন হাজী আবুল খায়ের জামে মসজিদ এর দক্ষিণ পাশের পুকুর হইতে তল্লাশী করিয়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
+2
All reactions:
16